জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্নাস শেষ করে পৃথিবীর যে কোন দেশে মাস্টার্স করতে যেতে পারবেন। এখন কথা হচ্ছে কী কী করে আপনি নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবেন। এখানে একটা মূল বিষয় হলো জিপিএ।



১। যদি চিন্তা ভাবনা থাকে যে স্কলারশিপ নিয়ে মাস্টার্স করবেন তবে জিপিএ ৩.৫ রাখার চেষ্টা করুন। এখন বলতে পারেন জিপিএ ৩.০ পেলেও তো স্কলারশিপ পাওয়া যায়। হ্যাঁ যায়, এমন অনেকেই আছে ২.৮ নিয়েও ফুল ফান্ডে লেখাপড়া করে। তবে সেটা কয় জনই বা পায়? এর থেকে ভালো হয় না যে জিপিএ ৩.৫ রাখা? তাহলে আপনার স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ অনেক গুণ বেড়ে যাবে।
২। IELTS, মোটামুটি যারা দেশের বাহিরে পড়তে আসতে চান এই শব্দটার সাথে পরিচিত। এই পরীক্ষার রেজাল্টের উপর আপনি ইংরেজি ভাষায় উপর কতটা দক্ষ তা বিবেচনা করা হয়। ইউরোপের প্রায় সব দেশের ভার্সিটিতে এডমিশন এবং ভিসা পেতে গেলে IELTS লাগে। IELTS এ ৬.৫ পাওয়া মানে আপনি নিরাপদ। ৬.০ দিয়েও অনেক ইউরোপীয় ভালো ভার্সিটি গুলোতে চান্স পাওয়া যায়। তবে স্কলারশিপ পেতে গেলে যত বেশি স্কোর থাকবে আপনার সুযোগ তত বাড়বে।
যদি মনে করেন IELTS দিবেন না, তাহলে চীন, মালয়শিয়া, ব্রুনাই, রাশিয়া ছাড়াও আরো বেশ কিছু দেশের গভঃ স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবেন। সেগুলোর তথ্য আপনার নিজেকেই কালেক্ট করতে হবে।
৩। কলেজে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস এর সাথে জড়িত হতে পারেন। বলতে পারেন এতে লাভ কী। লাভ আছে, অনেক ক্ষেত্রেই আপনি সার্টিফিকেট পাবেন। আর স্কলারশিপ পাবার ক্ষেএে এগুলো ভালো কাজে দেয়।
৪। ৩য় বর্ষে উঠে একটা লিস্ট বানাতে পারেন। লিস্টে স্কলারশিপের তথ্য, ভার্সিটির রিকয়ারমেন্ট গুলো নোট করতে পারেন। এতে করে পরে আবেদনের সময় সুবিধা হবে।
৫। ৩য় বর্ষের শেষের দিক থেকে IELTS এর প্রস্তুতি নিন।
৬। ৪র্থ বর্ষের প্রথম দিক থেকে ভালো মানের সিভি, রিসার্চ প্রপোজাল, মোটিভেশনাল লেটার লেখার চর্চা করুন। পারলে লিখে গুগল ক্লাউডে সেভ করে রাখুন।
৭। প্রফেসরকে আগেই বলে রাখুন তার থেকে আপনি রিকমেন্ডেশন লেটার নিতে চান, অর্নাস শেষ হবার আগেই এটা নিয়ে রাখতে পারেন।
৮। এই চার বছরে ছোট ছোট প্রজেক্ট করতে পারেন যেগুলো সুন্দর ভাবে সিভি তে গুছিয়ে লিখতে পারেন।
৯। পাবলিকেশন স্কলারশিপ পাবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে রিসার্চ এর সুযোগ নেই বললেই চলে। আর সেখানের শিক্ষক গুলোর পাবলিকেশন নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তাই অনেকটা নিজ প্রচেষ্টায় আপনাকে পেপার লিখে পাবলিশ করার চেষ্টা করতে হবে। অন্তত একটা পেপার থাকলে ভালো হয়।
অর্নাস শেষ করার পর এখন আপনি আবেদন করার জন্য প্রস্তুত। ঐ যে লিস্ট বানিয়েছিলেন, সেগুলো দেখে অনলাইন রিসার্চ করে বা গ্রুপের কারো হেল্প নিয়ে আবেদন করে ফেলুন। স্কলারশিপ পাওয়া অনেক সময় ভাগ্যের উপরও নির্ভর করে। আর যদি কিছু টাকা পয়সা থাকে সমস্যা নেই আপনি দেশের বাহিরের মোটামুটি অনেক ভালো ভার্সিটি তে মাস্টার্স করতে পারবেন। এমন অনেক উদাহরণ আছে।
লিস্ট বানানোর সময় ভার্সিটির রিকয়ারমেন্ট গুলো একটু ভালো করে চেক করে নিবেন। কিছু ভার্সিটিতে হয়তো আবেদন করতে পারবেন না৷ তবে তাতে কী, দুই- দশটাতে যদি আবেদন করতে নাই পারেন সমস্যা নেই।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন বলে নিজেকে আড়ালে রাখবেন না। পরিশ্রম করুন, ভালো কোথাও যেতে পারবেন, হয়তো পড়া শেষে দেশ বা বিদেশের কোন অফিসের উচ্চ পদেও চাকুরী পাবেন। কিন্তু সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। আপনাকেই ঠিক করতে হবে বিশ – চল্লিশ হাজার টাকার চাকরি করবেন নাকি চার বছর কষ্ট করে নিজেকে প্রস্তুত করে দেশের বাহিরের উচ্চতর শিক্ষা নিবেন তাও ফ্রি তে। ফুল ফান্ড পেলে আপার পকেটে প্রতি মাসে ভালো পরিমাণ টাকাই থাকবে।
এমন অনেকেই আছেন যারা ১০-২০ লক্ষ টাকা খরচ করে সরকারি চাকুরী নেন কিন্তু বেতন হয়তো ১০-৩০ হাজার টাকা। একবার চিন্তা করেছেন কি এই টাকা টা দিয়ে যদি দেশের বাহিরে ভালো কোন ভার্সিটি থেকে ভালো ভাবে পড়তে পারেন তাহলে কোন পজিশনে থাকতে পারেন? একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন। ভুল কিছু বলে থাকলে দুঃখিত।

Written by Imam Hasan,
University of applied science,
Berlin, Germany

Comments

Popular posts from this blog

তুর্কি দিয়ানাত ফাউন্ডেশনের স্কলারশিপের আদ্যোপান্ত

রিকমেন্ডেশন (Recomendation) লেটার এর নিয়ম (নমুনাসহ)

মোটিভেশন (Motivation) লেটার লেখার নিয়ম (নমুনাসহ)