আজকে কিছু কথা বলবো ফান্ডিং বা শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার খরচ যোগানো এবং নিজের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা অনেক ব্যয়বহুল। তাই অনেকেই ফান্ডিং/স্কলারশিপ নিয়ে চিন্তিত থাকেন। কিন্তু আমি মনে করি, আপনি যদি মেধাবী পরিশ্রমী এবং সচেতন একজন শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, তাহলে নিজের কিংবা পরিবারের এত টাকা খরচ সহজেই এড়াতে পারেন, পেতে পারেন ফুল ফান্ডিং। এমনকি আয় করে, অল্প করে হলেও বাড়িতে পাঠাতে পারেন।

এখন প্রশ্ন হলো আমি কিভাবে পাবো? কোথায় খুঁজবো? সাধারণত স্কলারশিপগুলো দুধরনের হয়ে থাকে; External and Internal. মানে হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে আসা স্কলারশিপ অথবা বাইরের কোন উৎস থেকে। বাইরের উৎস হতে পারে আপনার দেশের সরকারের দেয়া, কোন সংগঠনের দেয়া, কোন ফাউন্ডেশনের ইত্যাদি। যেমনঃ ফুলব্রাইট প্রোগ্রাম, শিভেনিং, কমনওয়েলথ, ইরাসমাস মোন্ডাস, হাংগেরি সরকার বৃত্তি, তুর্কী সরকারের বৃত্তি এবং বাংলাদেশ সরকারের দেয়া শিক্ষাবৃত্তি। এক্ষেত্রে শিক্ষাবৃত্তি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আলাদা আলাদা করে আপনাকে ব্যবস্থা করতে হবে, মানে হচ্ছে দুটোতেই আবেদন করবেন। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে যদি আপনি বৃত্তি পেয়ে যান, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আপনি পেয়েই যাবেন, অথবা ভর্তি আগে হয়ে গেলে, বৃত্তি পেতে সহজ হয়ে যায়।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ শিক্ষাবৃত্তির জন্য আপনাকে আপনার টার্গেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে এইড অ্যান্ড স্কলারশিপ সেকশনে গিয়ে ঘাটাঘাটি করবেন, তাদেরকে ইমেইল করবেন, আপনার পরিচিত কেউ থাকলে তার সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন। আপনার মেধা ও গবেষণাকে এগিয়ে নেয়ার জন্যই এগুলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই আপনাকে প্রমাণ করতে হবে আপনার মেধা ও দক্ষতা। অনেক প্রতিযোগিতা করে জিততে হবে এই শিক্ষাবৃত্তিগুলো। অনেক সময় ১/২/৩টা বৃত্তি মিলে আপনার পুরো খরচ কভার হয়।
তাহলে ফান্ডিং কি? ফান্ডিং আসলে কাবিখা, মানে হচ্ছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য- এর মত। আপনাকে ফুল বা হাফ বা একটি পরিমাণ ফান্ডিং তারা অফার করবে, এতে আপনাকে কাজ করতে হবে, এবং সেই কাজ হয় সাধারণত সপ্তাহে ২০ ঘন্টা। এই কাজের দাপ্তরিক নাম হচ্ছে RA এবং (গবেষণা সহকারি), TA( শিক্ষক সহকারি)। এখানে একটি আশার কথা হচ্ছে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগের প্রোগ্রামগুলোতে RAship, TAship দেয়া হয় এবং আপনাকে আলাদা করে তার জন্য আবেদন করতে হয় না। এতে প্রতিমাসে তারা আপনাকে যা টাকা দিবে, এতে আপনার থাকা-খাওয়ার হয়ে যাবে। থাকবে শুধু আপনার শিক্ষা ফি, সেটা ও অনেক সময় তারা মওকুফ করে দেয়। তবে সবকিছুতেই একটি শর্ত থাকে, আপনাকে মনেপ্রাণে পড়াশোনা ও গবেষণা করতে হবে। এখানে একটি কথা বলে রাখা দরকার, বিদেশে পড়তে আসা মানুষের ঘুরাঘুরির ছবি ফেইসবুকে দেখে আমরা যাতে এটা মনে না করি যে, ঘুরাঘুরির মাঝখানে কিছু কিছু পড়বো। এখানে পড়ালেখায় কোন ছাড় নেই, অনেক বেশি প্রেশার প্রতিটি শিক্ষার্থীর। কিন্তু থাকা-খাওয়া, পড়াশোনা সবমিলিয়ে একটি উন্নত জীবন আছে আপনি বলতে পারেন।
এই বৃত্তি/ ফান্ডিংগুলো সম্পর্কে জানতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সেই প্রতিষ্ঠাননের ওয়েবসাইট, জাতীয় পত্রিকা, আপনার সিনিয়র বা শিক্ষকদের সাথে নেটওয়ার্ক করা খুব জরুরি। আপনাকে জানতে হবে এগুলোর সারকুলার কবে আসে, কোথায় পাবেন, কিভাবে আবেদন করবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। নিজেকে তৈরি রাখতে হবে, সময়, সুযোগ ও মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। একমাত্র সচেতন, মেধাবী ও পরিশ্রমি শিক্ষার্থীরাই এই কাজ করতে বলে আমি মনে করি। কাজেই কাজে লেগে যান, নেমে পড়েন এই যাত্রায়।
© Muhammad Nurul Islam
PhD Student, University of Houston
Texas, USA
Comments
Post a Comment