তুমি

 গল্পটা অন্যরকম হতে পারত। কিন্ত সব গল্প এক নয়,কিছু গল্প কখনো সম্পূর্ণ হয় না। গল্প গুলো অপূর্ণ রয়ে যায় সারা জীবন। আমার গল্পটাও অনেকটা সেরকম। যে গল্প অপূর্ণ রয়ে গেলেও,তার স্মৃতি গুলো নিয়ে বেঁচে আছি।গল্পের শুরু একটি সুন্দর মেঘলা দিনে। অন্যান্য দিনের মত সেদিনও কলেজের বড় আম গাছটার নিচে বসে ছিলাম। ক্লাস না থাকলে এখানেই বসে থাকি আমি। কারণ,আড্ডা দেওয়ার মত সেরকম কোন বন্ধু নেই আমার। আসলে বানাতে পারি নি বলা উচিত। কারণ,আমি ছোট থেকেই মানুষজনের সাথে সেভাবে মিশতে পারি না। এভাবেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম,কিন্ত কেন জানি কিছু একটার অভাব বোধ করতাম। বুঝতাম না কি হতে পারে সেটা। তো একদিন কলেজের বড় আম গাছের তলায় বসে ক্লাসের বারান্দার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আর সেই মূহুর্তে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটি দেখতে পাই। একটি মেয়ে। যে ক্লাসরুম থেকে হেঁটে আসছিলো । আপাত দৃষ্টিতে বিষয়টা খুবই সাধারণ ব্যাপার বলে মনে হতে পারে। কিন্ত কোন এক কারণে আমার কাছে সেদিন তা অসাধারণ হয়ে উঠে। মেয়েটি তার চোখ দু'টো বন্ধ করে হাসছিলো আর হালকা বাতাসে চুল গুলো তার মুখে এসে পড়ছিলো। তাকে সেদিন নীল জামায় অপরূপ লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো চারিদিকে সময় যেন থমকে গিয়েছে। সেদিনের পর থেকে কিছু একটা হয় আমার। সব কিছুতেই কেন জানি ভালো লাগতে শুরু করে। মেয়েটির নাম জানতে ইচ্ছে করে খুব। কিন্ত জিজ্ঞেস করার মত কাউকে পাচ্ছিলাম না। আবার সরাসরি যে বলব সে সাহসও নেই। ভেবে পাচ্ছিলাম না কি করব। এরপর একদিন হঠাৎ করে মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। আমি ঠিক করি তাকে একটা উড়োচিঠি দিব। এই ফেসবুক,টুইটারের যুগে আইডিয়াটা সেকেলে মনে হতে পারে। কিন্ত আমি অন্যরকম কিছু  করতে চেয়েছিলাম,তাই চিঠি লেখাকেই মনে ধরে। তো অবশেষে একদিন চিঠি লেখার জন্য মনস্থির করলাম। সামনে সাদা পাতা আর হাতে কলম নিয়ে বসে আছি। কি লেখব বুঝতে পারছিলাম না। আবার তাকে সম্বোধনেরও একটা বিষয় আছে। তারপর মনে হলো তাকে নিয়ে আমি যা ভাবি তাই লিখে দিই। তাকে যেদিন প্রথম দেখি সেদিন আকাশটা না অনেক মেঘলা ছিলো আর সেদিন বৃষ্টিও হয়েছিলো খুব। তারপর থেকে বৃষ্টি দেখলেই তাকে আমার খুব মনে পড়ে। জানি না কেন। যা হোক অবশেষে শুরু করলাম লেখা,


"প্রিয়.....,
কিছু মনে করো না এভাবে শুধু প্রিয় বলার জন্য। আসলে আমি তোমার নামই জানি না যে নাম ধরে সম্বোধন করব। এরকম অচেনা কারও চিঠি পেয়ে হয়ত একটু অবাক লাগছে তোমার। আমি আগে কখনো চিঠিও লিখিনি আজই প্রথম লিখছি,তাও আবার একজন মেয়েকে। আমি জানি না এ চিঠি তোমাকে কোনদিন দিতে পারব কিনা। কেন লিখছি তাও হয়ত ভালো করে বলতে পারব না। তবুও লিখছি। কারণ,তোমার সাথে কথা বলার মত সাহস তো নেই আমার। আবার কিছু না বলে থাকতেও পারছি না। সবসময় মনে হয় যদি এমন কোন বন্ধু থাকত যার সাথে ইচ্ছে মত কথা বলতে পারতাম ,ঘুরে বেড়াতে পারতাম। কিন্ত বাস্তবে সেরকম কেউ আসে নি। আর আমিও একজন নিঃসঙ্গ মানুষ হিসেবে চলে আসছি। অনেক ভালো লাগত যদি কোনদিন তোমার সাথে কথা বলতে পারতাম। আমি শুধু তোমার বন্ধু হতে চাই। হবে কি আমার বন্ধু????
ইতি"
.......

চিঠি লেখা হলেও পাঠানোর কোন চিন্তা ভাবনা করি নি। করেই বা লাভ কি যা হবে না সেটা নিয়ে অযথা চিন্তারও মানে হয় না। লেখা শেষ হলে ডাইরীর মাঝে রেখে দিলাম,আর জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখতে লাগলাম। এভাবে একসময় কখন ঘুমিয়ে পড়ি টেরই পাই নি। পরদিন সকালে মোবাইলের অ্যালার্মের শব্দে চোখ খুলে দেখি ৭ঃ০০ টা বাজে। তড়িঘড়ি করে উঠে কোনমতে ফ্রেশ হয়ে কলেজে ছুটলাম। রাজ্জাক স্যার বাংলা ক্লাস নিচ্ছিলেন। অন্যান্য দিনে স্যারের ক্লাস মনোযোগ দিয়ে করতাম। কিন্ত আজ কিছুতেই মন বসছিলো না। বারবার জানালার গ্রীলের ফাঁক দিয়ে আকাশে চোখ চলে যাচ্ছে। কিন্ত এরকম সাদা আকাশ দেখতে একটুও ভালো লাগছিলো না। শুধু ঘন কালো মেঘ দেখতে ইচ্ছে করছিলো। মনে হচ্ছিলো আকাশে মেঘ করলেই তাকে দেখতে পাব। সে যেন এক বিদ্যুৎ রূপসী পরী। হঠাৎ স্যারের ধমকে সদবিত ফিরে পেলাম। এসব কি ভাবছি আমি। আর কেনই বা ভাবছি। খুবই অদ্ভুত লাগছে আমার কাছে বিষয়টি। আগে তো কখনো এরকম ঘটে নি। এসব ভাবতে ভাবতে ব্রেক এর সময় মাঠে বেরিয়ে আসি। তারপর আম গাছটার নিচে এসে যেই না বসেছি ডান দিকে তাকিয়ে দেখে সে বসে আছে। আমি চমকে গিয়ে প্রায় লাফ দিয়ে উঠেছিলাম।কোনমতে নিজেকে সামলে বসে পড়লাম। কিন্ত বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। উঠে চলে এলাম। কেমন জানি ভয় করছিলো। একটু দূরে গিয়ে গাছটির দিকে আবার তাকালাম,দেখি সে এদিকে তাকিয়ে আছে। এরপর আর দেরি না করে হোস্টেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সেদিনের পর আর দেখা হয় নি। তাছাড়া সামনে পরীক্ষা ছিলো তাই নিজেও একটু ব্যাস্ত ছিলাম। দেখতে দেখতে দু'মাস কেটে গেলো। আমিও তার কথা ভুলে গিয়েছিলাম প্রায়। কিন্ত হঠাৎ করে একদিন দেখা হয়ে যায় তার সাথে। আমি তখন ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে বসে আছি,আর কি অর্ডার দিব ভাবছি।  এমন সময় দেখি আমার সামনে সে এসে দাঁড়িয়েছে।
-"এক্সকিউজ মি,যদি কিছু মনে না করো এখানে      কি বসতে পারি?"
আমি হ্যাঁ বলার চেষ্টা করলাম। কিন্ত অদ্ভুত ব্যাপার কোন আওয়াজ বের হলো না। এভাবে হঠাৎ তার উপস্থিতি আমাকে  নার্ভাস করে দিয়েছে। তাই,মাথা নেড়েই বসতে বললাম। সে চেয়ার টেনে বসার পর বলল,
-"ইয়ে মানে আমি আসলে তোমালে একটা জিনিস দিতে এসেছি।"
"আমাকে আবার কি জিনিস......."
সে আমার দিকে একটা ছোট ভাঁজ করা কাগজ এগিয়ে দেয়। 
-"এটা আবার কি?"
-"কেন কিছু মনে নেই বোধ হয়। সেদিন যে আম গাছের নিচে বসেছিলে,তখন এটা পড়ে গিয়েছিলো হয়ত। তোমার হতে পারে ভেবে এনেছি।"
আমি বুঝতে পারছিলাম না কি হতে পারে তা। তবে যা দেখলাম সেটা মনে হয় কোনদিন ভুলতে পারব না। কাগজটি খোলার পর দেখি এটা সেই চিঠিটা যেটা আমি তাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলাম। কিন্ত সে পেল কিভাবে,আমি তো তাকে দেই নি। কি মনে হতে ব্যাগপ্যাকটা খুলে ডাইরিটা হাতে নিয়ে পাতা গুলো ওল্টাতে লাগলাম। নাহ চিঠিটি নেই। তাহলে বোধ হয় তার কথাই সত্যি,পড়ে গিয়েছিলো কোন এক সময়। কিন্ত সে এক বড় অদ্ভুত পরিস্থিতিতে পড়ে গিয়েছিলাম। কি করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তবু ইতস্ততভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করে ফেললাম,
-"তুমি কি চিঠিটি পড়েছ?"
প্রশ্নটা শুনে  বোধ হয় সে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলো।
-"ইয়ে আসলে না পড়ে তো আর উপায় ছিলো না। কার চিঠি নাম খুঁজতে গিয়ে আর কি.......। কিছু মনে করো না প্লিজ।"
-"না,মনে করার কি আছে। যেটা ভালো মনে হয়েছে সেটাই তো করেছ। তাছাড়া তোমার জায়গায় আমি থাকলেও একই কাজ করতাম।"
আমার কথা শুনে মনে হয় একটু ভার মুক্ত হলো। সেটা তার ছোট্ট হাসি দেখেই বুঝে গিয়েছলাম। 
-"তো,তুমি তাহলে চিঠি লেখতে পছন্দ কর?"
-"তা একটু করি। তবে এর আগে কখনো লেখি নি। এটাই প্রথম।"
-"ইন্টারেস্টিং। কিছু মনে না করলে কে সে সৌভাগ্যবতী জানতে পারি?"
-"তা পার। কিন্ত সেটা এখন বলছি না। তুমি নিজেই একদিন জেনে যাবে।
-"তাই বুঝি। বেশ তাহলে সেই দিনের অপেক্ষায় থাকলাম। তবে চিঠি কিন্ত খারাপ লেখো না তুমি।"
আমি কিছুটা অপ্রতিভ হয়ে,
-"ভালো না খারাপ তা জানি না। তবে যেটা সত্যি সেটাই লিখেছি। আর যা চেয়েছিলাম সেটাও বোধ হয় পেয়ে গিয়েছি।"
-"মানে?"
-"না কিছু না। আমার মনে হয় ক্লাস শুরু হতে দেরি নেই। এখন আমাদের বোধ হয় যাওয়া উচিত।"
-"ও। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্ত তুমি তো খেতে এসেছিলে। আমার সাথে গল্প করতে গিয়ে তো দেখি কিছুই খেতে পারলে না।"
-"সমস্যা নেই। পরে খেয়ে নেব।"
-"তাই বলে এতটা সময় না খেয়ে থাকবে কিভাবে?"
-"সে ব্যাপার না। এক আধটু না খেলে কিছু হয় না।"
-"ঠিক আছে। এখন তাহলে যাই,পরে দেখা হবে।"
-"ঠিক আছে।"
-"ও হ্যাঁ আমি তো পরিচয় দিতে ভুলেই গিয়েছি। আমি মেঘলা।"
-"আমি অর্ণব।"
এরপর দু'জনে ক্যন্টিন থেকে বেরিয়ে যে যার ক্লাসে চলে যাই। ক্লাস শেষ করে বিকেলে হোস্টেলে ফিরে আসি। অতঃপর সন্ধ্যায় বারান্দায় বসে স্মৃতিচারণ। আজ যা হলো তা কি আর অত সহজে ভুলে যাবার। আমি তখনো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে মেঘলা এভাবে চিঠিটা পেয়ে যাবে। কখনো কল্পনাও করতে পারি নি যে সে একদিন চিঠিটা পড়বে। আমার এটা ভেবে আরো অবাক লাগছিলো,যে আমি কারো সাথে সহজে মিশতে পারতাম না সে আমি কিভাবে এত সহজে তার সাথে বসে গল্প করলাম। রাতে শোবার পরও তাকে ভুলতে পারছিলাম না। আনন্দে ঘুমই আসছিলো না আমার। এসব ভাবতে ভাবতে কিভাবে যেন ঘুমিয়ে পড়ি। পরের দিন ছিলো ছুটির দিন তাই ঘুম থেকে ওঠার তেমন কোন তাড়া ছিলো না। সেদিন একটু দেরি করেই ঘুম থেকে উঠলাম। অন্যান্য ছুটির দিন গুলোতে কোনমতে সময় কাটাতাম শুধু। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খাও। তারপর কখনো ফোনে বাসার খোঁজ-খবর  নিতাম,কখনো বড়ভাই রুমমেট দের সাথে আড্ডা মেরে চালিয়ে দিতাম। মাঝে মধ্যে হোস্টেলের কাছেই কোথাও বের হতাম। কিন্ত সেদিন এর ব্যাতয় ঘটে। বিকেলের দিকে বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসার জন্য বের হয়েছিলাম। ছুটির দিন ছিলো তাই রাস্তাঘাটেও ভিড় নেই আবার দোকানপাটও বেশিরভাগ বন্ধ। আনমনে এভাবে যখন হাঁটছি তখনি মনে হলো পেছন থেকে কেউ একজন বোধহয় আমার নাম ধরে ডাকল। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি মেঘলা রিকশা থেকে আমায় ডাকছে।  কিছুটা অবাক লাগল এভাবে হঠাৎ করে ডাকায়।
“Hi! অর্ণব”
“Hi!”
“কোথাও যাচ্ছিলে বুঝি?”
“তেমন কোথাও না। ছুটির দিন তাই একটু বের হয়েছি। তা তুমিও বোধহয় কোথাও যাচ্ছিলে?”
“হ্যাঁ। কিছু জিনিস কিনতে গিয়েছিলাম আরকি।”
“ওও।”
“তা তুমি কি এখানেই থাক ?”
হ্যাঁ। কলেজের হোস্টেলেই থাকি আপাতত।”
“ভালোই তো। সামনে দুই ব্লক পরেই আমার বাসা। আর সেদিকেই যখন যাচ্ছ অসুবিধা না থাকলে একসাথেই যাওয়া যাক।”
“অবশ্যই। আমার কোন অসুবিধা নেই।”
“ঠিক আছে। তো কেমন যাচ্ছে দিনকাল তাহলে?”
 “আমার আবার কিসের দিনকাল। খাও দাও আর পড়ো। মাঝে মধ্যে একটু বের হওয়া। এভাবেই চলছে সবকিছু।”
“সে হিসেবে তো তেমন কোন চিন্তা নেই তাহলে তোমার জীবনে?”
“তা কিছুটা ঠিক। আসলে সেভাবে চিন্তা করে এগোয় নি কখনো। যখন যে অবস্থায় থেকেছি সেটা নিয়েই মাথা ঘামিয়েছি। তাই কারো জন্যও আর সেভাবে ভাবি না।”
“তবে আমার কিন্ত মনে হয় না। বিশেষ করে সেদিন চিঠিটা পড়ে আমার কিন্ত অন্যকিছু মনে হয়েছে।”
আমি কিছুটা অবাক হলাম সে বিষয়টা এখনো মনে রেখেছে বলে।
“তুমি তাহলে এখনো মনে রেখেছ ঘটনাটি। সত্যি করে বলতে সেটা পুরোটাই ভিন্ন একটা ব্যাপার। আসলে আমি নিজে কখনো মানুষের সাথে সেভাবে মেলামেশা করি নি। তাই অনেক ঘটনাকেই আমার কাছে খুব অদ্ভুত লাগে। নিজেকে অনেকবার প্রশ্ন করেছি। কিন্ত উত্তরগুলো কখনো খুঁজে পাই নি।”
“আমার মনে হয় কি জান। তোমার সব প্রশ্নের উত্তর ঐ মেয়েটির কাছেই লুকিয়ে আছে। ভালো হয় তুমি যদি তাকে চিঠিটা সত্যি সত্যি পাঠিয়ে দাও।”
“আরে না না....আমি কেমনে....”
“শোনো তুমি যদি যোগাযোগ না কর তাহলে কোনদিনই তোমার এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবে না।”
“তবুও...”
“যেটা বলছি সেটা করো তো আগে। ওইতো বাসায় এসে পড়েছি।”
তার বাসা চলে আসায় এরপর আর বেশিদূর কথা এগোয় না।”
“ঠিক আছে আমি তাহলে যাই এখন।”
“ওমা বাসায় আসবে না তুমি?”
“ না থাক। অন্য দিন না হয় যাব।”
“ঠিক আছে। কাল কলেজে দেখা হচ্ছে তাহলে।Bye.”
“Bye.”
এরপর মেঘলার বাসার সামনে থেকে সরাসরি হোস্টেলে ফিরে আসি। বেশ একটা ঝামেলায় পড়ে গেলাম ভাবছি। এখন কিনা চিঠি পাঠাতে বলছে সে। ওকে তো আবার বলতেও পারি না যে সেই মেয়েটি আর কেউ নয় তুমি। বলতে যে একদম ইচ্ছে করে না তাও না। কিন্ত বলি না,যদি ভুল কিছু ভেবে বসে। 
এরপর দেখতে দেখতে কলেজ লাইফের শেষে চলে আসলাম। কয়েকমাস পর ফাইনাল পরীক্ষা। তাই সারাদিন ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। এই দু’বছরে তার সাথে অনেক ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। পেরিয়ে আসা সেসব দিন গুলো কখনো ভোলার মত নয়। তার বন্ধু হতে পেরে যেন এক নতুন দুনিয়া আবিষ্কার করেছিলাম। তার সাথে দেখা করার জন্য তৃষ্ণাতর হয়ে থাকতাম। মনে হত সবসময় আমাকে কিছু একটা তার প্রতি টানছে। কয়কেদিন কথা না হলেই কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগত নিজেকে। একদিন অনেক বিচিত্র একটা অভিজ্ঞতা হয় তাকে নিয়ে। সেদিনটির কথা কখনো ভুলতে পারব না। সে এমন এক স্মৃতি যেটা একই সাথে আমার জীবনে  সুখ এবং দুঃখের কারণ। সেদিনও কলেজ শেষ করে যথারীতি মাঠের আম গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে মেঘলার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
“সরি,একটু লেট হয়ে গেলো।”
 “ইটস ওকে। কিন্ত...এত দেরি হলো কেন?”
“আর বলো না একটা ক্লাস টেস্ট মিস করার জন্য এত কৈফিয়ত দিতে হবে কে জানত।”
“ও। তা আজ হঠাৎ অপেক্ষা করতে বললে যে,কোন সমস্যা হয়েছে নাকি?”
“ধুরো তোমার শুধু সমস্যা। কেন মানুষ এমনি দেখা করতে পারে না নাকি?”
“না তা পারে। কিন্ত আমাদের তো প্রায়ই দেখা হয়।”
“সে না হয় দেখা হয়। কিন্ত আজ ডেকেছি বিশেষ একটা কারণে।”
“বিশেষ মানে…ঠিক কি কারণে?”
“আজ একটা জায়গায় বেড়াতে যাব ভাবছিলাম। তাছাড়া তোমার সাথে কিছু কথাও ছিলো।”
“হ্যা,সে না হয় ঠিক আছে। কিন্ত কি এমন কথা যে শোনার জন্য অন্য জায়গায় বেড়াতে যেতে হবে?” 
“তুমি না অনেক বেশি প্রশ্ন কর। সোজা কথায় যাবে কিনা বল?”
“এভাবে বললে না কি করে বলি। চলো তাহলে। কিন্ত যাচ্ছিটা কোথায় আমরা?”
“সেখানে গেলেই বুঝতে পারবে।”
এরপর দু’জনে মিলে একসাথে হাঁটা শুরু করলাম। তারপর কিছুদূর গিয়ে একটা রিকশা নিলাম। তখন আমার মনে একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো কোথায় নিয়ে যাবে মেঘলা। আর কিইবা বলতে চাচ্ছে সে। প্রায় দশ মিনিট ধরে রিকশায় করে চলার পর লক্ষ্য করলাম শহর থেকে কিছুটা দূরে চলে এসেছি। এদিকটায় শহরের কোলাহল থেকে অনেকটাই মুক্ত। কিছুদূর গিয়ে সে রিকশাওয়ালাকে থামতে বললো। এরপর ভাড়া মিটিয়ে উত্তর দিকে হাঁটা শুরু করলাম। কিছুক্ষণ হাঁটার পর তার কাঙ্খিত স্থানে চলে এলাম।
“তো এখানেই তাহলে বেড়াতে আসতে চাচ্ছিলে।”
“হ্যাঁ,এখানেই আসার কথাই বলেছিলাম। এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা।”
“বেশ সুন্দর তো।
“হুমম।”
জায়গাটা আসলেই অনেক সুন্দর ছিলো। একটা সবুজ মাঠের পাশ দিয়ে নদী বয়ে গেছে। আমরা দু’জন নদী আর মাঠের মাঝে নিচু হয়ে যাওয়া সিমেন্টের ব্লক গুলোতে বসে ছিলাম। নদীর ওপাশে কালো ঘন মেঘ করেছে। শীতল বাতাস এসে মাঝে মধ্যে তার চুল গুলো উড়িয়ে দিচ্ছে। আর মেঘলা,সে এক মনে তাকিয়ে আছে আকশের দিকে। মনে হচ্ছিলো বৃষ্টি নামলেই সে ডানা মিলে উড়ে চলে যাবে ওই দূর আকাশে। তার মত পরীদের বুঝি এই মেঘলা আকাশের নিচেই সবচেয়ে  বেশি মানায়। দূর থেকে মেঘের ডাক ভেসে আসে। আওয়াজ শুনে কেমন একটা ভয় কাজ করে মনের ভেতর। মনে হয় মেঘলা যদি কোনদিন চলে যায়। আমি চেয়েছিলাম একজন বন্ধু কিন্ত পেয়েছি একজন বন্ধুর চেয়েও অনেক বেশি কিছু। যে আমার ভালো মন্দ সব কিছুতে জড়িয়েছে। বন্ধু হয়ে কখনো অভিমান করেছে আবার কখনো আনন্দে আত্মহারা হয়ে আমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। সব কিছুকে নতুন করে চিনিয়েছে মেঘলা। এভাবে কখন যে তাকে ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতেই পারি নি। ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়। কখন কিভাবে আসবে বোঝা যায় না। কিন্ত যখন আসে সেই মানুষটিকে ভালোবাসার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলি আমরা। বেশি কিছু না তার কাছে থাকতে পেরেই মনের ভেতর অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করত। কখনো কখনো ইচ্ছে করত সারাটা জীবন যদি এরকম করে তাকে কাছে পেয়ে বৃষ্টি দেখতে পারতাম। সে দিনটি ছিলো আমার কাটানো সবচেয়ে সুন্দর দিন। কিন্ত প্রকৃতিতে বোধহয় কোন কিছুই সবসময় সুন্দর থাকে না। সেদিনও আমার সাথে প্রকৃতি তাই করেছিলো।
“তুমি মেঘলা,আকাশও মেঘলা। এরকম পরিবেশ আমি আগে কখনো দেখি নি।”
“কথা তো দেখি বেশ গুছিয়ে বলতে পার। তবে চারপাশটাকে কিন্ত সত্যি অনেক সুন্দর লাগছে এখন। বাতাসের সাথে বৃষ্টি ভেজা মাটির গন্ধ ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে এখানেই থেকে যাই।”
“হুমম। বৃষ্টি তাহলে তোমাকেও উদাস করে দিয়েছে মনে হচ্ছে।”
“তোমার বৃষ্টি ভালো লাগে?”
“খুব। আমার অনেকদিনের একটা ইচ্ছে কোন এক বৃষ্টি ভেজা দিনে আমি বারান্দায় বসে থাকব। তার সামনে দিয়ে এরকম একটা নদী বইয়ে যাবে। আর আমি সেই বারান্দায় বসে আমার প্রিয় মানুষটির সাথে চায়ের কাপ হাতে নদীতে বৃষ্টি পড়া দেখব।”
“বাহ তোমার স্বপ্নটা তো বেশ সুন্দর। আমারও না বৃষ্টি দেখতে অনেক ভালো লাগে। মেঘ দেখলেই আমার ভিজতে ইচ্ছে করে।”
সে দিনটি ছিলো আমার কাটানো সবচেয়ে সুন্দর দিন। মনে মনে চাইতাম সেই প্রিয় মানুষটি যেন মেঘলাই হয়। কিন্ত প্রকৃতিতে বোধহয় কোন কিছুই সবসময় সুন্দর থাকে না। সেদিনও আমার সাথে প্রকৃতি তাই করেছিলো।
“অর্ণব। আজ তোমাকে ডেকেছি একটা কথা বলতে। এখন জানি না বললে তুমি কিছু মনে করবে কিনা?”
“তোমার কথা বলার সময় এই ফর্মালিটির অভ্যাসটা কবে যাবে বলো তো। বন্ধুর সাথে এত ভণিতা করে কথা বললে হয় নাকি।”
 “আচ্ছা ঠিক আছে এরপর আর হবে না। এখন কথাটা যে কিভাবে বলব  ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি মানে...আমি বোধহয় কারো প্রেমে পড়ে গিয়েছি।”
“প্রেম মানে!! কি...কিভাবে। আর কার প্রেমে???”
“সত্যি করে বলতে গত কয়েকদিন ধরে নিজেকে কেমন জানি অস্থির লাগছিলো। যখন থেকে তাকে দেখেছি কিছুতেই ভুলতে পারছি না। কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। তাই মনে হলো তোমাকে বললে তুমি হয়ত আমার মনের অবস্থাটা বুঝবে।  
“সে না হয় বুঝলাম। কিন্ত কে সে, কিছু কি জানো?”
“তেমন কিছু জানি না। কিন্ত এটা জানি যে সে আমাদের সাথেই পড়ে।”
“বেশ তো দেখি তাহলে কি করতে পারি।”
“তুমি সত্যি সাহায্য করবে?”
“কেন নয়। তোমার মত বন্ধুর জন্য এটা অন্তত করতেই পারি।”
“আমি যে তোমাকে কি বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব বলে বোঝাতে পারব না।”
“কিছু বলা লাগবে না। এখন চলো যেকোন সময় বৃষ্টি চলে আসতে পারে।”
“চলো তাহলে।”
এরপর আর বসে থাকলাম না। মেঘলাকে নিয়ে রাস্তায় উঠে রিকশা খুঁজতে লাগলাম। কিছুদূর হাঁটার  পর একটা রিকশায় তাকে উঠিয়ে দিলাম। একসাথে যেতে পারতাম কিন্ত গেলাম না। আসলে যাবার মত মানসিক অবস্থা ছিলো না আমার তখন। মেঘলা কাউকে পছন্দ করে বিষয়টা এত সহজে মেনে নিতে পারছিলাম না। সব কিছু ওলট পালট লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো একটা বড় ঝড় বয়ে গিয়েছে আমার উপর দিয়ে। রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর বারবার নিজেকে প্রশ্ন করছি কেন এরকম হলো। যদিও মেঘলার পূর্ণ অধিকার আছে কোন মানুষকে পছন্দ করার ব্যাপারে। কিন্ত আবেগের কাছে কোন যুক্তিই যেন টিকছিলো না। সে এভাবে হারিয়ে যাবে কখনো ভাবতে পারি নি। আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলেও হয়ত ভালোবেসে ফেলত। এভাবে চলতে চলতে একসময় আকাশ থেকে ঝুমঝুম করে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়। একসময় যে বৃষ্টি আমার সুখ স্মৃতির আধার হয়ে ছিলো আজ সে বৃষ্টি জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর স্মৃতির সাক্ষী হয়ে রইল। চোখের পানি আটকে রাখতে পারি নি আর। আকাশও যেন আমার কষ্টে কেঁদে ভিজিয়ে দিচ্ছিলো আমায়। এরপর বৃষ্টিতে ভিজেই হেঁটে হোস্টেলে ফিরে আসি। সেদিন রাতে বেশ ভালো করেই জ্বর এলো বৃষ্টিতে ভেজার কারণে। অবস্থা এমন যে ডাক্তারের কাছে পর্যন্ত যেতে পারছিলাম না। জ্বরের জন্য দু'দিন কলেজ যাই নি। ৩য় দিন একটু সুস্থ হলে কলেজ গেলাম। ব্রেকের সময় ক্যান্টিনে খাবার খেতে গেলাম। টেবিলে বসার কিছুক্ষণ পরেই দেখি মেঘলা এসে হাজির।
“এতদিন কই ছিলে তুমি। আর এত শুকিয়ে গেছো কিভাবে? কিছু হয়েছিলো নাকি।”
“তেমন কিছু না একটু জ্বর হয়েছিলো আরকি।”
“তোমার মুখের চামড়া এভাবে শুকিয়েছে আর তুমি বলছ কিছু হই নি। নিশ্চয় সেদিন বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে এসেছিলে। আমার সাথে আসলে কি এমন ক্ষতি হতো।”
“আরে তুমি চিন্তা করো না ঠিক হয়ে যাব আমি।”
“কেমন ঠিক হয়েছো তা তো দেখতেই পাচ্ছি। হোস্টেলে বসে কি না কি খাচ্ছো কে জানে।”
“সে নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।”
“তাইতো আমি কেন চিন্তা করব। আমি তোমার শত্রু তাই না।”
“আচ্ছা বাবা হয়েছে। এবার থামো, আমাকে খেতে দাও।”
এরপর দু'জনে মিলে আরো কিছুক্ষণ গল্প করলাম। এর মধ্যে ব্রেক শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্লাসে ফিরে আসি। তারপর ছুটি হলে সরাসরি  হোস্টেলে চলে যাই। রাতে আবার তার ভাবনায় ডুবে যাই। যতদিন যাচ্ছে তত যেন তার সাথে এক মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে যাচ্ছি। তার এসব ছোটখাটো রাগ অভিমান গুলো ভালোবাসাটা কে যেন আরো সুন্দর করে তুলছিলো। কিন্ত বাস্তবতা ছিলো অন্যরকম। সেটা অনেক তিক্ত হলেও কখনো  মেনে নিতে হয়। আমাকেও তাই করতে হবে। তবে যাবার আগে জীবনের শেষ চিঠিটা লিখে যেতে চাইলাম।
“প্রিয় মেঘলা,
এখন তো আমি তোমার নাম জানি তাই সম্বোধন করতে আর সমস্যা নেই। গতবার চিঠিটি তোমার পাবার কথা ছিলো না কিন্ত তবুও তুমি পেয়েছিলে কোনভাবে। আর সেটাই যে আমার জীবন কে এভাবে পালটে দিবে কে জানত। কিন্ত এবার আর কোন ভুল নয়। এ চিঠি তুমি কোনদিনও পাবে না। তবুও কোন এক অজানা কারণে লিখছি। জানি তুমি আসবে না, তবু তোমায় লিখতে ভালো লাগে। ভালো লাগে তোমার অনেক কিছু। ভালো লাগে তোমার ঐ হাসি মুখ আর হাওয়ায় উড়তে থাকা সেই ঘন কালো চুল। পৃথিবী তে সবচেয়ে বড় দূরত্ব কি জানো। ভালোবাসার মানুষটি সামনে থেকেও তাকে বলতে না পারা কতটা ভালোবাসি আমি। আমি শুধু তোমার হাসি মুখ দেখতে চেয়েছি আর কিছু না। কখনো কখনো প্রিয় মানুষের হাসির চেয়ে কোন কিছুই বেশি মূল্যবান হয় না। আজ এই বিদায় বেলায় শেষ একটা উপহার দিব। আর দূর থেকে তোমার ঐ মন ভোলানো হাসিটা শেষবারের মত দেখব। 
ইতি
অর্ণব”
চিঠিটা লিখে নিজের কাছেই রেখে দিলাম। যে চিঠির কোন গন্তব্য নেই।
পরের দিন যথারীতি মেঘলার সাথে দেখা হয় কলেজে। ব্রেকের সময় দু'জনে মিলে আম গাছটার নিচে বসি।
মেঘলা-“শরীর ভালো হয়েছে তোমার?”
“হ্যাঁ,আপাতত ভালো আছি। তা কি জানি বলবে বলেছিলে তুমি?”
“ও হ্যাঁ আসলে একটা কথা বলার ছিলো আরকি। তুমি কি ঐ ছেলেটার কোন খবর পেয়েছিলে?”
“কোন ছেলেটা?”
“কেন সেদিন যে বললাম। এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে।”
“কই মনে পড়ছে না তো।”
“তোমার সাথে না কথা বলাটাই বেকার।”
“আরে রাগ করছ কেন। আমি তো এমনি মজা করছিলাম। তুমি বলবে আর আমি এত সহজে ভুলে যাব হতেই পারে না। ওর সম্পর্কে সব খোঁজ নিয়েছি।”
“সত্যি! তা কি মনে হলো?”
“ভালোই,খারাপ না। দেখতে শুনতে তো ভালোই মনে হলো, বাকিটা তোমার ব্যাপার।”
“কিন্ত কিভাবে কি করব?”
“সে আমার উপর ছেড়ে দাও।”
“সত্যি!”
“হ্যাঁ,এতটুক যখন করতে পেরেছি তাহলে বাকিটা করতে সমস্যা কি।”
“তুমি এত কিছু করছ...তোমার অবদান আমি কোনদিন ভুলতে পারব না অর্ণব। Thanks a lot.”
এরপর স্বাভাবিক ভাবেই সে আবেগে কেঁদে ফেলতে চায়। হওয়ারই কথা, কেউ যখন তার ভালো লাগার মানুষটিকে কাছে পেতে যাচ্ছে সে তো আবেগময় হয়ে উঠবেই। এর মাঝে আমারও চোখের কোণায় পানি চলে আসতে চায়। কোনমতে তা আড়াল করি। করতে যে আমাকে হবেই। আমার মত মানুষদের যে কখনো চোখের পানি ফেলতে নেই। এরপর জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজটি করি। মেঘলা কে তার পছন্দের মানুষের সাথে থেকে হাজারো স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিই। সব কিছুই তো শেষ তাহলে আর থেকেই বা কি করব। আমিও চলে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে নেই। কিছু মানুষকে একাই থাকতে হয় সারা জীবন। তারা নিঃসঙ্গ হয়েও খুশি শুধু ভালোবাসা দিতে পেরে। ভালোবাসা এক অদ্ভুত জিনিস যা পাওয়াটা যত না আনন্দের,তার চেয়ে বেশি আনন্দের কাউকে ভালোবাসাটা।
....আজকে নিয়ে পুরো দশ বছর হয়ে গেলো। এতক্ষণ ধরে যে গল্প বললাম মনে হচ্ছিলো এতটুকুও পুরনো হয় নি। সব কিছু বদলে গেলেও পুরনো সে ভালোলাগা এখনো রয়ে গেছে। এই কয়েক বছরে অনেক কিছু পেয়ছি তবুও মেঘলার অভাব বোধ করি। আসলে ভালোবাসা কোনদিন পুরনো হয় না। ভালোবাসা তো সেটাই যাকে ভালোবাসার পর অন্য কাউকে ভালোবাসার ইচ্ছেটাই মরে যায়। এই দশ বছর পর আজও সেদিনের মত বৃষ্টি হচ্ছে। নীল আকাশে কালো মেঘ জমেছে। মাঝে মধ্যে মাটির গন্ধ মেশানো ঠাণ্ডা বাতাস আমার মুখে এসে লাগছে। আর আমি বারান্দায় বসে সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর দিকে তাকিয়ে আছি। আকাশ থেকে যখন বৃষ্টি পড়া শুরু হয় নদীটি কে দেখতে অদ্ভুত লাগে। নদীর পানিতে বৃষ্টি পড়ার সেই অদ্ভুত আওয়াজে নিজেকে যেন কোথায় হারিয়ে ফেলি। অনুভূতি গুলো সব আগের মত রয়ে গেছে। নেই শুধু তুমি মেঘলা। আজ আমার হাতে তোমাকে আমার জীবনের প্রথম লেখা দুটি চিঠি ধরে আছি। চিঠি গুলো তোমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা হলেও আজও তা আমার কাছে রয়ে গিয়েছে। ভালোবাসার অনুভূতি গুলো হলো পাখির মত। পাখি কি কখনো খাঁচায় থাকতে পছন্দ করে। তার ঠিকানা তো ঐ মেঘের উপরে। তাই নিজ হাতে চিঠি দু'টো কে টুকরো করে সব অনুভূতি গুলোকে পাখির মত উড়িয়ে দিলাম বৃষ্টি ভেজা আকাশে। সেই ঘন কালো মেঘলা আকাশ যেখানে পাখির মত একদিন তুমিও উড়ে গিয়েছো। আর আমি আজও একা হয়ে এই বারান্দায় বসে আছি। তোমার জন্য রেখে দেওয়া চায়ের কাপটা আর কখনো পূর্ণ হলো না।



লেখকঃ সাফওয়ান আহমেদ


Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

তুর্কি দিয়ানাত ফাউন্ডেশনের স্কলারশিপের আদ্যোপান্ত

রিকমেন্ডেশন (Recomendation) লেটার এর নিয়ম (নমুনাসহ)

মোটিভেশন (Motivation) লেটার লেখার নিয়ম (নমুনাসহ)