অসমাপ্ত গল্প
সকাল ৭ টা বেজে কিছু.... রোদেলার ফোনে ঘুম ভাঙ্গে। রোদেলা হাসপাতালে যাচ্ছে, মেঘলা কাল রাতে ঘুমের ঔষধ খেয়ে সুইসাইড করেছে। খবরটা পেয়ে - আমি যেনো থমকে গেলাম। একবার ভাবলাম হাসপাতালে যাই, তৈরিও হতে শুরু করলাম। তারপরে নিজেকে আটকে নিলাম। না যাওয়াটাই উচিত হবে। আসলে আমার আর মেঘলার সম্পর্কটা খুব কম লোকই জানত। আর যারাই জানত, কেউই মেনে নিত না। তাই এমন সময়ে তাদের কথা ভেবেই আর পা বাড়াই নি। রোদেলাকে সামলানোর জন্য যদিও যাওয়া উচিত; কিন্তু থাক ও তো জানত না আমার আর মেঘলার সম্পর্কের কথা, আজ কোনো ভাবে জানলে ও আরও বেশি ভেঙে পড়বে। কারণ প্রথমে সে আমাকে প্রপোজ করেছিল। আমি না করে দিয়েছিলাম।
মেঘলার সঙ্গে সম্পর্কটা শুরু হয় অদ্ভুদভাবে। তখন আমি সবে রংপুর থেকে এসে ভার্সিটিতে ভর্তি হই। রোদেলা আর মেঘলা দুইজনই দুই জনের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। আমার সাথে প্রথম আলাপ হয় রোদেলার। তারপর তার মাধ্যমে মেঘলার সাথে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা তিনজনই কাছের বন্ধু হয়ে উঠলাম। অল্প দিনে বুঝলাম মেঘলার মনে আমি একটু অন্যভাবে জায়গা পেতে শুরু করেছি। তাইতো কখনো আমরা একসাথে কোথাও গেলে নানা বাহানায় তার আমাকে ছোঁয়ার প্রচেষ্টা, বেশি কাছে আসার চেষ্টা করা, সুযোগ পেলে আলতো করে জড়িয়ে ধরা, আবার কখনো শুধু আমার সাথে বের হওয়ার প্ল্যান করা.... আমার অবশ্য ভালো লাগতো তার সঙ্গ। আর তারপর সেদিন দুপুরে আমার ফ্ল্যাটে আমার ঘরে বসেই ঠিক করলো আমরা সিনেমায় যাবো, শো আর এক ঘণ্টা পরেই। কল দিয়ে টিকেটও কাটা হয়ে গেলো। কিন্তু যাওয়া আর হলো না আমাদের। আমি তাড়াতাড়ি স্নান করে বেরোতেই মেঘলা এক অদ্ভুত চোখে দেখতে শুরু করলো। আমি দুই একবার আমার চোখ সরিয়ে নিলাম কিন্তু অবশেষে আর পারলাম না। সে আমার কাছে এসে আমার ভেজা চুলের ফাঁকে আঙ্গুল হারিয়ে ঠোঁটের ছোঁয়ায় আবার যেনো সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দিল। কখন যেনো সে আমার একমাত্র পরে থাকা তোয়ালে টা জড়িয়ে তার ভালোবাসার চাদর মুড়েছে আমি বুঝতেও পারিনি। যখন ক্ষান্ত হলাম তখন তার শূন্য বুকে আমার মুখ গুজানো। আমার সমস্ত শরীরে তার নখের শিল্প। তার ঠোঁটে বুকে আমার ভালোবাসার ক্ষত চিহ্ন।
সেদিনই সে বলে যে আমাদের সম্পর্কটা কি সকলে মেনে নিবে? আমি নিশ্চুপ! কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলি - ভালোবাসার জোরে মানিয়ে নিবো।
ধীরে ধীরে দু বাড়িতে আমাদের সম্পর্কের কথা জানাজানি হয়, বাধা দে। আমার বিশ্বাস ছিল তারা রাজি হবে। আমার বিশ্বাসে মেঘলার ও বিশ্বাস ছিল। কাল রাতেও ভিডিও চ্যাট এ সে বলেছিল নানান কথা। আমি বলি - না রে বোকা, আমাদের বাবা মা তাদের সন্তানের খুশি সবার থেকে বেশি বুঝবে; আর না হলে মৃত্যু আমাদের এক করবে......
হয়তো সে কথাটা.... মৃত্যু আমাদের....। আমরা খুব ভালোভাবেই জানতাম যে আমাদের বিয়ে কখনো সম্ভব না। সে জন্যই আজ হয়তো মেঘলা আর আমাদের মাঝে নেই। এবার বাবা মা খুশি হবে, তাদের ছেলের পথের কাঁটা দূর হয়েছে। তাদের ছেলে এক সময় মেঘলাকে ভুলে যাবে! তারপর একটা মেয়ে দেখে বিয়ে দিবে! কিন্তু তারা বুঝে না আমার অন্য মেয়ের গায়ের গন্ধ টা পছন্দ না, তাদের গলের মসৃণতা আমার পছন্দ না। শুধু মেঘলার গালে গাল ঘষতে, তার গন্ধ চাদর মেখে ঘুমুতে, তার বুকের জামার মধ্যে মুখ গুজে গন্ধ শুকতে আমার ভালো লাগে। কিন্তু আজ মেঘলা আর নেই....
আব সকাল থেকে বহুবার চেষ্টা করেছি মেঘলার মুখটি একবারের জন্য হলেও দেখার, কিন্তু সাহস করে উঠতে পারলাম না। মৃত্যুকে আপন করা অত সহজ না। কিন্তু মেঘলাকে ছেড়ে বাঁচার যন্ত্রণাটা বেশি কঠিন। আমি পারবো না তাকে ছেড়ে থাকতে। এক মুহুর্ত বাঁচতে। আমি কিভাবে তাকে ছেড়ে নিজেকে কল্পনা করি.....। আমি সত্যি পারবো না মেঘলা তোমাকে ছেড়ে থাকতে।
আমার বাম হাতের ধমনী দিয়ে রক্ত পড়ছে... ডান হাতে ধারালো ছুরি টা। রক্তে দুই হাত রঞ্জিত হয়ে গেছে। চোখের সামনে আলো কমছে। আর স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি মেঘলা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমার দিকে। আমি হাসি মুখে তার হাত স্পর্শ করি.......
সাফওয়ান আহমেদ
Comments
Post a Comment